একটি দল বা গুচ্ছ নিরূপিত হয় ভৌগলিক সমাবেশ বা কেন্দ্রীকরণ হিসাবে(একটি মহানগরী/ শহর / কিছু সংলগ্ন গ্রামসমূহ এবং তাদের সন্নিহিত অঞ্চলসমূহ) যা কাছাকাছি একই ধরণের উপাদানের দ্রব্য উপন্ন করছেন এবং মুখোমুখি হচ্ছেন যৌথ সুযোগ সুবিধার ও আশঙ্কার। একটি কারুশিল্পী দল নিরূপিত হয় ভৌগলিক দিক থেকে কেন্দ্রীভূত (প্রধানত গ্রামগুলিতে/ছোট শহরগুলিতে) পরিবার পরিজনের দল যারা হস্তশিল্পের / হস্ত চালিত তাঁতের উপাদিত দ্রব্য সমূহ উপাদন করছেন। একটি বৈশিষ্ট্য সূচক দলে এইরকম উপাদকরা প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হন, যাহারা বংশানুক্রমে স্বীকৃত দ্রব্য উপাদন করছেন। বস্তুত, অনেক কারুশিল্পী দল হলেন শতাধিক বছরের পুরনো কারুশিল্পী। কলাভূমি গোষ্ঠী সম্বন্ধে :- কলাভূমি বঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলাতে কলকাতা গোষ্ঠী পড়ে। কলাভূমি গোষ্ঠী 700 এর বেশী কারিগর গঠন করতে সক্ষম হয়েছে এবং 60 টি স্বয়ন্ভর গোষ্ঠী এই শক্তিশালী কর্মশক্তিকে সহায়তা দিচ্ছেন। চলন শক্তির গতিবেগ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।হস্ত সূচিশিল্প / চিকনের কাজ :- পশ্চিম বঙ্গে সবথেকে জনপ্রিয় সূচিশিল্প হচ্ছে কাঁথা করা হয় লোকাচার শিল্পকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যে। অন্যান্য সূচিশিল্পগুলির মধ্যে পরে চিকনের কাজ, জড়ির কাজ এবং কাশিদা বা কাশ্মীরি সূচিশিল্প। চিকণ সূচিশিল্পের খাঁটি, সুক্ষ্ম আকার বা আকৃতি সাধারণত: করা হয় মিহি বুনটের কাপড়ের উপর যেমন মসলিন বা সুতির কাপড়। সূচিশিল্প প্রচলিত ভাবে করা হয় কাপড়ের রং এর একই রং এর সুতো দিয়ে। যেমন নীল সুতো ব্যবহার করা হয় হালকা নীল রং এর কাপড়ে এবং সাদা সুতো ব্যবহার করা হয় সাদা কাপড়ে। যদিও সাদা কাপড়ের উপর সাদা সুতো জনপ্রিয় মিশ্রন, অন্যান্য রং এর সুতোও সাদা কাপড়ের উপর ব্যবহার করা হয়।সুতির কাপড়ের উপর রেশম সুতোর সূচিশিল্প, কাশিদা, খুবই সাধারণ রূপ এবং প্রাথমিকভাবে ব্যাবহার করা হয় মুসলমানদের প্রার্থনার সময় ব্যবহৃত মাথার টুপি অথবা মাথায় পরিহিত রুমাল বা চাদর এর জন্য। আরও সমসাময়িক আধুনিক সূচিশিল্পের মথ্যে পরে কাশ্মীরি সেলাই, আড়াআড়ি সেলাই, প্রথাসম্মত সেলাই , কাটা কাজ এবং সংমিশ্রণ। কাঠিয়াওয়াড়ী আয়নার কাজও অতিপ্রাচুর্য্য ভাবে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক রীতি আলপনা অঙ্কনকে এবং ফুল, প্রাণী ও পাখির শিল্পকর্মের বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে ।চেপ্টা বা সমতল তলা বিশিষ্ট মুখ্য সেলাইগুলির চিরাচরিত নামগুলি হল :- তায়াপচি : ধাবন সেলাই এর কাজ কাপড়ের সঠিক বা সোজা দিকে করা হয়। কখনও কখনও এটা সমান্তরাল সারির মধ্যে করা হয় শিল্প কর্মের বৈশিষ্ট্যে ফুলের পাপড়ি বা পাতা দিয়ে ভরাট করার জন্য যেটাকে বলা হয় ‘ঘাসপাত্তি’। কোনও সময় তায়াপচি ব্যবহার করা হয় সমস্ত কাপড়ে বেল ফুলের বুটি তৈরী করার জন্য। এটা হচ্ছে সহজতম চিকন সেলাই এবং প্রায়ই পরিবেশিত হয় চুমকি বসিয়ে অধিকতর অলংকরণের জন্য। এটা জামদানির সঙ্গে মিলে যায় এবং এটাকে মনে করা হয় সবথেকে সস্তা ও সবথেকে তাড়াতাড়ি করার সেলাই। পেচনী: অন্যান্য ধরণের কাজের জন্য কখনও তায়াপচিকে ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়, পেচনী তাদের মধ্যেএকটা। এখানে তায়াপচি কে ঢেকে দেওয়া হয় সুবিন্যস্ত পদ্ধতিতে এর উপরে সুতোর প্যাঁচ দিয়ে যাতে একটা লিভার স্প্রিং এর মত প্রভাব ফেলা যায় এবং এটা করা হয় সবসময় কাপড়ের সোজা দিকে। পাশনি: তায়াপচি কাজ করা হয় শিল্পকর্মের বৈশিষ্ট্যকে সীমারেখা দেওয়ার জন্য এবং তারপর ঢেকে দেওয়া হয় অতিক্ষুদ্র আগাগোড়া প্রায় দুটো উলম্ব সাটিন সেলাই দিয়ে এবং সূক্ষ্ম ভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করা হয় বদলার ভিতরের দিকে। বখেয়া: এটা সব থেকে সাধারণ সেলাই এবং হামেশাই উল্লেখিত হয় প্রচ্ছায়া কজের জন্য। এটা দুইধরণের :(ক) উল্টো বখেয়া : কাপড়ের বিপরীতে সেলাইগুলি ভেসে থাকে শিল্প কর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির নীচে। স্বচ্ছ মসলিন কাপড়টি অস্বচ্ছ বা আলোনিরোধক হয়ে যায় এবং আলো ও ছায়ার একটা সুন্দর প্রভাব দেয়।(খ) সোজা বখেয়া : প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা সুতোর আড়াআড়ি ছেদ সহ সাটিন (মিহি ও মসৃন) সেলাই। সুতোর ভাসমান অংশটা কাপড়ের পৃষ্ঠের উপরে থাকে। কাপড়ের বিন্যাসকে ভরাট করার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং কোন আলোর বা ছায়ার প্রভাব থাকে না।খাটাও, খাটাওয়া অথবা কাটাওয়া হচ্ছে কাটা কাজ অথবা অ্যাপ্লিক (এক জাতের বা রঙের উপাদান অন্য জাতের বা রঙের উপাদানের উপর খাটিয়ে তৈরী করা নকসার কাজ) সেলাই অপেক্ষা কৌশলই বেশী । গিট্টি : বোতাম গর্ত ও লম্বা সাটিন (মিহি ও মসৃন) সেলাই এর সংমিশ্রন সাধারণত: চাকা সদৃশ শিল্প কর্মের বৈশিষ্ট্য তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হয়। জাঙ্গিরা : চেন সেলাই সাধারণত: সীমারেখার জন্য ব্যবহৃত হয় পেচনীর লাইন অথবা পুরু তায়াপচির সমাহারে।মোটা বা গিঁট গিঁট সেলাই নিম্নলিখিতগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে: মুর্রী : খুব সূক্ষ্ম সাটিন সেলাই যেটাতে একটা গিঁট বানানো হয় ইতিমধ্যে সীমারেখা দেওয়া তায়াপচি সেলাই এর উপরে।ফান্দা : এটা মুর্রী’র ছোটো এবং খাটো রূপ। গিঁট গুলো বৃত্তাকার এবং খুব ছোট, মুর্রীতে হওয়া নাসপাতির মত আকার নয়। এটা খুব কঠিন সেলাই এবং প্রয়োজন খুব ভাল শিল্পকুশলতার। জালি : জালি অথবা জাফরি বা মাচা যেটা চিকণকারীতে তৈরী করা হয় সেটা এই শিল্প কৌশলের অনন্য বিশেষত্ব। সূঁচকে নিজের মত সুবিধাজনক করে নিয়ে সুতোকে না কেটে বা টেনে গর্তগুলো তৈরী করা হয়। কাপড়ের সুতো থেকে আঁশ বের করে সরিয়ে রেখে পরিস্কার নিয়মিত ভাবে গর্ত বা জালি তৈরী করা হয়। অন্যান্য কেন্দ্রে যেখানে জালি করা হয়, সেখানে সুতোগুলোকে টেনে বের করতে হবে। চিকণকারীতে এরকম হয় না। জালি কৃ কৌশলের নামই পরামর্শ দেয় কোন জায়গা থেকে এটা উদ্ভাবিত হয়েছে – মাদ্রাসী জালি অথবা বাঙালী জালি—অথবা সম্ভবত নির্দিষ্ট জালির জন্য চাহিদার জায়গা। যে মৌলিক পদ্ধতির দ্বারা জালি তৈরী করা হয় সেটা হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট কায়দায় গুটিয়ে ফেলা ও ভারী সুতোগুলোকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে কাপড়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মুখ তৈরী করা হয়। খোলা মুখের আকার এবং ব্যবহৃত সেলাই একটা জালি থেকে অন্য জালিকে আলাদা করে। কাঁচামাল:- কাপড়ের উপর কাজ করা হয় লম্বা সূঁচ, সুতো, টিকরী এবং পুঁতি দিয়ে নকশা করে। বিভিন্ন ধরণের মাপের বেষ্টনী বা কাঠামো ব্যবহার করা হয়, সাধারণত: 1 1/2 ফুট উঁচু, কাপড়কে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য যার উপর স্টেনসিল দিয়ে নকশা আঁকা হয়েছে। এক হাত দিয়ে সূঁচ এর সঙ্গে সুতো কাপড়ের নীচে ধরে রাখা হয় আর অন্য হাত দিয়ে কাপড়ের উপর সূঁচকে সহজভাবে ঘোরানো হয়।প্রক্রিয়া:- চিকনের পোশাক পরিচ্ছদের উপাদন পদ্ধতি, ধরে নেওয়া যেতে পারে এটা একটা কূর্ত্তা, বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়। প্রত্যেকটা পদ্ধতির জন্য আলাদা আলাদা লোক জড়িত। যাই হোক, চূড়ান্ত দায়িত্ব হচ্ছে সেই ব্যাক্তির যিনি প্রস্তুত করার আদেশ দিচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবে তিনি আবার বিক্রেতাও। চিকন এর কাজে বিভিন্ন পর্যায় আছে। কাপড়টি প্রয়োজনীয় পোশাকের মাপ বা আকার দর্জি দ্বারা কাটা হয়। তারপর প্রথমিক প্রাক সূচিশিল্পের সেলাই করা হয় যাতে ব্লক-ছাপা ব্যাক্তির কাছে সঠিক মাপ উপলব্ধ হয় যাতে তিনি নকশার স্থাপন পরিকল্পনা করতে পারেন। নকশা ছাপা হয় অর্ধ সেলাই হওয়া পোশাক এর উপর ক্ষণস্থায়ী রং এর সাহায্যে, এবং তারপর পোশাক এর সূচি শিল্প আরম্ভ হয়। শেষ হওয়ার পর, সামগ্রীটি যত্ন সহকারে পরীক্ষা করা হয় যেহেতু প্রথম দর্শনেই বেশীরভাগ দোষ ত্রুটিই ধরা পড়ে। যাইহোক, সূক্ষ্ম খুঁতগুলি উপরিভাগে চলে আসে ধোওয়ার পরই। ধোওয়া কাজটি সম্পন্ন করা হয় ভাট্টিতে, তারপর পোষাকটিকে মাড় বা শ্বেতসার দেওয়া হয় ও ইস্ত্রি করা হয়। পুরো পর্যায়টিতে সময় নিতে পারে এক থেকে ছয় মাস পর্যন্ত। প্রথমদিকে, চিকন সূচি শিল্পের কাজ হত সুতির সাদা নরম কাপড় যথা মখমল অথবা কেমব্রিক ব মিহি কার্পাস বস্ত্রে সাদা সুতো দিয়ে। কোন কোন সময় এটা করা হত জালির উপরে একরকম লেস বা করুকার্যময় ফিতা তৈরী করার জন্য। আজকের দিনে চিকন এর কাজ কেবলমাত্র রঙীন সুতো দিয়েই করা হয় না তাছাড়াও সমস্ত ধরণের কাপড় এর উপর যথা – রেশম, ভাঁজ বিশিষ্ট পাতলা কাপড় (ক্রেপ), অর্গান্ডি সিফন এবং তসর এর উপর করা হয়।কৌশল :- সেলাই প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও নিয়ম শৃঙ্খলা বা পদ্ধতি আছে। রিফু জাতীয় সেলাই করা হয় খসখসে সুতির কাপড়ের উপর কোণযুক্ত নকশা ভর্ত্তি করার জন্য এবং কাপড়ের তল বা পৃষ্ঠ ঢাকার জন্য, যেখানে সাটিন বা মসৃণ সেলাই করা হয় আলাদা ভাবে বা বিশেষভাবে পেলব বা নাজুক কাপড় যেমন- রেশম, মখমল অথবা লিনেন ( পাট বা শণের কাপড়) এর উপর। চিকনে, কিছু সেলাই করা হয় কাপড়ের উল্টো দিক থেকে, পক্ষান্তরে অন্যান্যগুলো করা হয় কাপড়ের সোজা দিক থেকে। অথচ এটা অনন্য এর নিয়মানুবর্তিতায় যে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য যত ধরণের সেলাই নিরুপিত কেবলমাত্র সেই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয় – তারা অন্য সেলাই দ্বারা বদলযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরুপ – চেন সেলাই ( জঞ্জিরা) ব্যাবহার করা হয় কেবলমাত্র চূড়ান্ত ভাবে পাতা, ফুলের পাপড়ি বা কান্ডের রুপরেখা বা বর্হিরেখার জন্য। বিভিন্ন ধরণের বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ধরণের সেলাই নিয়ে কাজ করেন। যেমন, খোলা কাজ বা জালি কাজ সেই সমস্ত সূচিশিল্পীরা করেন না যারা ভর্ত্তি করার কাজ করেন—প্রত্যেকটা কর্মচারী তার নিজস্ব কাজের ছোট অংশ বা টুকরো সম্পূর্ণ করেন এবং কাপড়টি তারপর পরবর্তী সূচি শিল্পীর কাছে পাঠান হয়। প্রত্যেকটা কাজের পারিশ্রমিক আলাদা আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট হয়।কি ভাবে পৌঁছাবেন :- আকাশ পথে :-
কোলকাতার বিমানবন্দর দমদমে অবস্থিত, শহরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে প্রায় 17 কিমি উত্তর পূর্বে। বেশীরভাগ অন্তর্দেশীয় বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার সরাসরি পরিষেবার ব্যবস্থা আছে কোলকাতাতে ও কোলকাতা হইতে ভারতবষের্র অন্যান্য শহরগুলিতে যেমন দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই, পাটনা, বারাণসী, লখ্নৌ ইত্যাদি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশীর ভাগ দেশেই কোলকাতা থেকে সরাসরি বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা আছে। সড়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে :- ভারতবর্ষের বেশীরভাগ শহরের সঙ্গেই সড়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে কোলকাতা সংযুক্ত। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এসপ্ল্যানেড (ধর্মতলা) প্রান্তিক কেন্দ্রই বাস পরিষেবার প্রধান প্রান্তিক কেন্দ্র। ঢাকা – কোলকাতা বাস পরিষেবা শুরুই হল নূতন উন্নয়ন। বাসগুলি বর্ণাঢ্য, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ও আরামদায়ক। রেল পথের পথের মাধ্যমে :- এই শহরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন আছে—একটা হাওড়ায় ও অন্য একটা শিয়ালদহতে। দেশের অন্যান্য প্রান্ত হইতে রেল যোগযোগের মাধ্যমে কোলকাতাকে সংযুক্ত করেছে। অত্যন্ত দ্রুতগামী ট্রেন যেমন –রাজধানী এক্সপ্রেস এবং শতাব্দী এক্সপ্রেস এই শহরকে দিল্লীর সঙ্গে এবং কাছাকাছি শহরগুলিকে যেমন বোকারো এবং রাউরকেল্লাকে সংযুক্ত করেছে । করমন্ডল এক্সপ্রেস ও গীতাঞ্জলী এক্সপ্রেস কোলকাতাকে সংযুক্ত করেছে যথাক্রমে চেন্নাই ও মুম্বাই এর সঙ্গে।