একটি দল বা গুচ্ছ নিরূপিত হয় ভৌগলিক সমাবেশ বা কেন্দ্রীকরণ হিসাবে(একটি মহানগরী/ শহর / কিছু সংলগ্ন গ্রামসমূহ এবং তাদের সন্নিহিত অঞ্চলসমূহ) যা কাছাকাছি একই ধরণের উপাদানের দ্রব্য উৎপন্ন করছেন এবং মুখোমুখি হচ্ছেন যৌথ সুযোগ সুবিধার ও আশঙ্কার। একটি কারুশিল্পী দল নিরূপিত হয় ভৌগলিক দিক থেকে কেন্দ্রীভূত (প্রধানত গ্রামগুলিতে/ছোট শহরগুলিতে) পরিবার পরিজনের দল যারা হস্তশিল্পের / হস্ত চালিত তাঁতের উৎপাদিত দ্রব্য সমূহ উৎপাদন করছেন। একটি বৈশিষ্ট্য সূচক দলে এইরকম উৎপাদকরা প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হন, যাহারা বংশানুক্রমে স্বীকৃত দ্রব্য উৎপাদন করছেন। বস্তুত, অনেক কারুশিল্পী দল হলেন শতাধিক বছরের পুরনো কারুশিল্পী
বঙ্কিমনগর গোষ্ঠী সম্পর্কে :-
ত্রিপুরা রাজ্যের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মধ্যে বঙ্কিমনগর গোষ্ঠী পড়ে।
বঙ্কিমনগর গোষ্ঠী 274 এর বেশী সুদক্ষ কারিগর গঠন করতে সক্ষম হয়েছে এবং 25 টি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এই শক্তিশালী কর্মশক্তিকে সহযোগিতা করছে। দিনে দিনে চলনশীলতার গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বেত এবং বাঁশ:-
স্মরণাতীত কাল থেকে হস্তশিল্পের জগতে ত্রিপুরা নিজেই নিজের নাম খোদাই করে রেখেছে। প্রভুত সহজাত গুণসম্পন্ন কারুশিল্পীরা বেত, বাঁশ এবং কাঠের মত সাধারণ পদার্থ দিয়ে বিস্ময় সৃষ্টিকারী শিল্প-কৌশলের জিনিষ তৈরী করেন। তাদের দুর্লভ শিল্পীসুলভ দক্ষতাকে আরও নিপুণতর এবং আরও ফলপ্রদ করে তোলা হয়েছে নিঁখুত চমৎকারিত্বপূর্ণ বাড়ীর বিভিন্ন জিনিষপত্র তৈরীতে। ত্রিপুরার অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং উদার প্রকৃতি ত্রিপুরার বংশানুক্রমিক কারুশিল্পীদের তাদের সবথেকে পছন্দসই আশীর্বাদ প্রদান করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, রজ্যের জনসংখ্যাতাত্বিক চরিত্রেরও পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের ইতিহাসের প্রতিটা পর্যায়ে, ত্রিপুরা দেখিয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্যশীল উত্তরাধিকারকে অব্যাহত রেখেও তার আত্তীকরণ সংশ্লেষণের বিশিষ্ট আভ্যান্তরীন শক্তিকে। এখানকার মৌলিক স্বতন্ত্র উপজাতীয় শিল্পকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য সহযোগে মণিপুরী ও বাঙ্গালী শিল্পকুশলীদের দক্ষতা যুক্ত হয়েছিলো যারা পরবর্তীকালে এখানকার মাটিতে উপনিবেশ স্থাপন করার জন্য এসেছিলো।
বেত এবং বাঁশ ত্রিপুরার জনজীবনে একটা স্বাতন্ত্র্যসূচক জায়গা দখল করে রেখেছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্যন্ত এমন কোন অনুষ্ঠান নেই যেটা বেত ও বাঁশ ছাড়া সম্পূর্ণ হয়। আজকের দিনে কারুশিল্পীদের দর্শনীয় দক্ষতাকে পরিচালিত করা হয়েছে 200 টিরও বেশী অপরূপ সুন্দর দ্রব্যের উৎপাদনের সীমানার ব্যাপকতায়। বর্তমানে, প্রায় 10,000 দক্ষ শিল্পকুশলী এই রাজ্যে যুক্ত আছে বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্প দ্রব্যের উৎপাদনে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই গতিপথে চলার পদক্ষেপ প্রবর্তিত করেছে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে এই শিল্পের বিপুল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিত। রাজ্য এই ক্ষেত্রেও ব্যাক্তিগত উদ্যোগকে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
ত্রিপুরার বেত / বাঁশের হস্তশিল্প দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় সবোর্ত্তম তাদের সৌন্দর্য, মাধুর্য এবং সূক্ষ্ম নকশার জন্য এটা স্বীকৃত। এক বিশাল প্রসারতার দ্রব্য উৎপাদিত হয় যার মধ্যে আসবাবপত্র, ফলক ও বিভাজন, টেবিল এবং অন্যান্য মাদুর জাতীয় দ্রব্য, আলো ঢাকা ইত্যাদি। বাঁশের এবং বেতের অলংকারও প্রকৃতিতে খুব সূক্ষ্ম এবং জটিল। বাঁশ এবং বেতের অলংকার দেশের অন্যান্য জায়গায় এবং বাইরেও উপলব্ধ নয়।
কাঁচামাল:-
ত্রিপুরার হস্তশিল্পও বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক, মজবুত এবং আকর্ষনীয় বাঁশ দিয়ে কেবলমাত্র মাদুর, ঝুড়ি এবং অন্যান্য হস্তশিল্পও তৈরী হয় না কিন্তু আরও ব্যবহৃত হয় উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন পণ্য দ্রব্যের আবরক, শোভাবর্ধক ফলক, পরদা এবং জানালার খড়খড়ি বা পর্দা হিসাবেও। বাঁশের তৈরী জানালার খড়খড়ি বা পর্দা, সত্যি কথা বলতে কি, কেবলমাত্র ঘরের আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় উচ্চাঙ্গের ছোঁয়াই দেয় না সঙ্গে সঙ্গে ঘরকে ঠান্ডাও রাখে। বাঁশের শিল্প -কৌশল এর নির্দিষ্ট বোনার পদ্ধতি নির্ভর।
যে কোন উৎপাদিত দ্রব্যের জন্য বেত ও বাঁশ খুব গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। বেত এবং বাঁশ হচ্ছে মৌলিক উপাদান। বেত এবং বাঁশ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আমরা যে কোন দ্রব্যই বেত ও বাঁশ দিয়ে বানাতে পারি।
কৌশল এবং যন্ত্রপাতি :-
বাঁশ গাছের ফাঁপা কান্ড অথবা ডাঁটা পর্বমধ্যে ভাগ করা হয় সিলিন্ডারের আকৃতিবিশিষ্ট বা বাক্সের মত কাঠামোর আকার দেওয়ার জন্য। বেতগুলিকে লম্বালম্বিভাবে কেটে সমদৈর্ঘ্যের বেঁকানো যেতে পারে এমন ভাগ করা যেতে পারে, পোক্ত বাঁশ ঝুড়ি বানানোর কাজ ছাড়া অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। কাঁচা বা অপোক্ত বাঁশ দিয়ে সহজে কাজ করা যায় শুকনো এবং শোষিত পদার্থ অপেক্ষা, এবং ঝুড়ি তৈরীর কাজের জন্য যেগেুলো শুকনো হলে অল্প ছোট হয়ে যায়, এগুলোর অতিরিক্ত সুবিধা আছে। ঝুড়ি তৈরীর কাজের জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতির দরকার হয় সেগুলোর মধ্যে আছে ধারালো ছুরি অথবা কর্ত্তণী ছাঁটার জন্য, একটা গুণছুঁচ শক্ত বুনুনির মধ্যে একটা ফুটো করতে যাতে নতুন বেত ঢোকানো যায়, এবং একটি আঘাত করার যন্ত্রপাতি অথবা চালক অনুভূমিক রেখা পত্তন করতে। প্রায় সবই অন্যান্য ব্যবহারের জন্য, বাঁশ অবশ্যই পোক্ত হবে, এবং কাঠের কাজ করার জন্য যন্ত্রপাতি ---করাত, তুরপুন, উখা এবং হাতুরী - শুকনো এবং শক্ত হয়ে যাওয়া পদার্থ দিয়ে কাজ করতে প্রয়োজন। গতানুগতিক কাঠের কাজের জোড় ব্যবহৃত হয় যেমন - প্রান্তভাগের জোড়, কাঠের প্রান্তভাগ খাঁজের মধ্যে ঢুকে সৃষ্টি করা জোড়, খাঁজে খাঁজে লাগানো জোড় এবং কোনাচি-জোড়; এইগুলিকে অবশ্যই রদবদল করতে হবে বাঁশের ফাঁপাত্ব'র ক্ষতিপূরণ করতে। লম্বালম্বিভাবে বাঁশের জোড় দেওয়া অংশগুলির জন্য, জোড়ের ভিতরের দিকে দুই টুকরো কাঠ আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয় এবং তারপর ফুটো করে কাঠের প্যানা দিয়ে আটকানো হয়। যখন একটি বাট জোড় (দুই টুকরো কাঠের প্রান্তিক দিককে অধিক্রমণ না করে জোড়া লাগানো হয়) কে কাজে লাগানো হয়, তখন গজাল জাতীয় পেরেকের মাথা উখা দিয়ে মসৃন করা হয় আড়াআড়ি ভাবে স্থাপিত টুকরার রূপরেখা মানানসই করতে। জোড়গুলিকে আরও শক্তিশালী করা হয় লম্বালম্বিভাবে টুকরো করা বাঁশ দিয়ে বেঁধে। গরম করে অথবা একটা নির্দিষ্ট আকারের উপর বেঁকিয়ে রেখে বাঁশকে পছন্দসই আকৃতিতে আনা যেতেপারে।
বোনার জন্য বাঁশের প্রক্রিয়াকরণ :-
বাঁশের ডাঁটার সবুজ ছাল অপসারণ করা হয় এর সবুজ পৃষ্ঠভাগকে কোন ব্লেড বা ফলার সাহায্যে চেঁছে ফেলে। ডাঁটার পৃষ্ঠভাগ বরাবর সমভাবে বল প্রয়োগ করা হয় বাঁশের রঙের সমতা নিশ্চিত করতে।
ডাঁটার উপরের অংশের প্রান্তসীমা চ্যাপ্টা করে ফেলা হয় সরু লম্বা অংশ পাওয়া সহজতর করতে। একটা ধারালো ছুরি ব্যবহার করা হয় প্রান্তসীমার চতুর্দিকে সমানভাবে কাটতে। ডাঁটার অংশটা সমান প্রশস্ততায় ছোট ছোট পাতলা ফালিতে ভাগ করে ফেলা হয়। ছোট ছোট পাতলা ফালির সংখ্যা নির্ভর করবে ডাঁটার ব্যাসের উপর। ডাঁটার প্রান্তসীমার থেকে লম্বা বরাবর নীচের দিকে খুব যত্ন সহকারে কাটা হয়। পৃথক পৃথক খন্ড হিসাবে পাওয়ার জন্য ছোট ছোট পাতলা টুকরোগুলো তারপরে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে ফেলা হয়।
ছোট ছোট পাতলা ফালিগুলো লম্বা লম্বা রেখাযুক্ত করে সূক্ষ্ম স্তরে পরিণত করা হয়। ফলার সঙ্গে ছুরিকে লম্বালম্বিভাবে ধরা হয় ছোট ছোট পাতলা ফালির উপরের 1/3 অংশের আড়াআড়ি ভাবে কাটা টুকরার বিপরীতে। প্রথমে কাটা হয় ব্লেড বা ফলাকে এই ছোট ছোট পাতলা ফালির মধ্যে খুঁচিয়ে ঢুকিয়ে। তারপর ফলাকে রাখা হয় প্রথম স্তর থেকে 0.5 থেকে 1.0 মি.মি. দূরত্বে। প্রয়োজন অনুসারে এই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করার পর, স্তরগুলোকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এই স্তরের পুরুত্ব নির্ভর করবে অভিপ্রেত বুনন সামগ্রীর প্রয়োজন অনুসারে। দুই হাত ব্যবহার করে স্তর গুলিকে আলাদা আলাদা করা হয় পাতলা পাতলা ফালিতে। ফালিগুলি একে অন্যের থেকে হালকা অথবা গাঢ় রঙের হতে পারে। সেইভাবেই তাদেরকে সাজান হয়।
বাঁশের ফালি বা চিলতে গুলো তাপর বিভিন্ন রকম সামগ্রীর সাহায্যে রং করা হয় অথবা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সাদা করা হয় যেমন - রঞ্জক, সালফার, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড অথবা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা। এই উদ্দেশ্যে ভেজানো, ফোটানো, ধোওয়া, বাতাসের সাহায্যে শুকানো ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
কি ভাবে পৌঁছাবেন :-
রাজ্যের প্রধান বিমানবন্দর অবস্থিত আগরতলায় - রাজ্যের রাজধানী। অনেক সরকারি ও ব্যক্তিগত বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়মিত ভাবে আগরতলাতে ও আগরতলা হইতে উড়ান পরিচালনা করেন। কোলকাতা এবং গৌহাটি হইতে বিমানযোগে আগরতলা পৌঁছাতে ৪৫ মিনিটেরও কম সময় লাগে। এই রাজ্যে আরও ৩টি বিমানবন্দর আছে যেমন - খোয়াই, কামালপুর এবং কৈলাশাহার যেখানে ছোট ভাড়া করা বিমান খুব সহজে অবতরণ করতে পারে।