একটি দল বা গুচ্ছ নিরূপিত হয় ভৌগলিক সমাবেশ বা কেন্দ্রীকরণ হিসাবে(একটি মহানগরী/ শহর / কিছু সংলগ্ন গ্রামসমূহ এবং তাদের সন্নিহিত অঞ্চলসমূহ) যা কাছাকাছি একই ধরণের উপাদানের দ্রব্য উৎপন্ন করছেন এবং মুখোমুখি হচ্ছেন যৌথ সুযোগ সুবিধার ও আশঙ্কার। একটি কারুশিল্পী দল নিরূপিত হয় ভৌগলিক দিক থেকে কেন্দ্রীভূত (প্রধানত গ্রামগুলিতে/ছোট শহরগুলিতে) পরিবার পরিজনের দল যারা হস্তশিল্পের / হস্ত চালিত তাঁতের উৎপাদিত দ্রব্য সমূহ উৎপাদন করছেন। একটি বৈশিষ্ট্য সূচক দলে এইরকম উৎপাদকরা প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হন, যাহারা বংশানুক্রমে স্বীকৃত দ্রব্য উৎপাদন করছেন। বস্তুত, অনেক কারুশিল্পী দল হলেন শতাধিক বছরের পুরনো কারুশিল্পী। উদয়নারায়ণপুর ব্লক গোষ্ঠী সম্বন্ধে :- পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলাতে উদয়নারায়ণপুর ব্লক গোষ্ঠী পড়ে। উদয়নারায়ণপুর ব্লক গোষ্ঠী 1162 এর বেশী কারিগর গঠন করতে সক্ষম হয়েছে এবং 100 টি স্বয়ন্ভর গোষ্ঠী এই শক্তিশালী কর্মশক্তিকে সহায়তা দিচ্ছেন। চলন শক্তির গতিবেগ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।জড়ি :- ধাতব সুতো দিয়ে সূচি শিল্পকে বলা হয় ‘কলাবত্তু’ এবং জড়ির আকার নেয়। মুখ্য জড়ি উৎপাদন কেন্দ্রগুলি হল মহারাষ্ট্রের প্রাভনি। এখানে ধাতব ধাতুপিন্ডগুলি গলান হয় ধাতব বার এ অর্থাৎ ধাতুর লম্বা খন্ডে যাকে বলা হয় ‘পাসা’ যেখান থেকে লম্বা লম্বা খন্ড পাওয়া যায় বিশেষ আচরণের পর কোন কিছু দিয়ে আঘাত করতে করতে। একে তারপর ছিদ্র ওয়ালা স্টিল এর পাতের মধ্য দিয়ে টেনে বের করা হয় তারে পরিণত করার জন্য যেটা অনুসৃত হয় তারকাশি পদ্ধতি দ্বারা রবার ও হীরার ছাঁচ এর সাহায্যে আরও পাতলা করার জন্য। শেষ পর্যায় কে বলা হয় ‘বদলা’, যেখানে তারগুলো চ্যাপ্টা করা হয় এবং রেশম অথবা সুতির সুতো দিয়ে পাক খাওয়ানো হয় ‘কসব’ বা ‘কলাবত্তু’ হওয়ার জন্য। এর একই মসৃনতা, নমনীয়তা, নরমতা এবং প্রসার্যতা থাকে। কসব কে আসল রুপা বা সোনা’র সঙ্গে একই সাড়িতে দাঁড় করান যেতে পারে, একই সঙ্গে রুপা অথবা সোনার পাত এর জন্য অথবা অনুকরণ এর জন্য যেখানে তামার তল বা ভিত্তি দেওয়া হয় তারপর সোনা অথবা রুপার প্রলেপ দেওয়া হয় এই সামগ্রী গুলোকে কম খরচ সাপেক্ষ করে তোলার জন্য। বয়ন এ জড়ি সুতো ব্যাপকমাত্রায় ব্যবহৃত হয় কিন্তু অধিকমাত্রায় বেছে বেছে সূচি শিল্পে। জটিল বাঁধা ছাঁদের জন্য ‘গিজাই’ অথবা একটা পাতলা তার ব্যবহার করা হয়; ‘সিতারা’, একটি ছোট তারা-আকারের ধাতব খন্ড ফুলের নকশার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের সূচি শিল্প কে বলা হয় ‘সালমা-সিতারা’। অপেক্ষাকৃত মোটা ‘কলাবত্তু” হচ্ছে পাড়ের জন্য ব্যবহার করা বিনুনি করা সোনার সুতো পক্ষান্তরে পাতলা রকম এর টা ব্যবহার করা হয় টাকা রাখার ছোট থলে বা বটুয়া বন্ধ করার জন্য যে সুতো ব্যবহার করা হয় সেই সুতোর শেষ প্রান্তের সুতোর জন্য, শোভা বাড়ানোর জন্য ঝুলিয়ে দেওয়া সূত্রগুচ্ছ’র জন্য, নেকলেস এর জন্য এবং অন্যান্য সুতোর জন্য। ‘টিকোরা’ হচ্ছে পেঁচিয়ে পাকানো সোনার সুতো জটিল নকশার জন্য ব্যবহৃত হয়। অনুজ্জ্বল জড়ি সুতো কে বলা হয় ‘কোরা’ এবং অধিকতর চকচকে গুলোকে বলা হয় ‘চিকনা’ । সূচী শিল্পের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রটি হচ্ছে চৌকোনা কাঠের কাঠামো যাকে বলা হয় ‘কারচোব’ এবং একটি কাঠের পা যাকে বলা হয় ‘থাপা’ ব্যবহৃত হয় কারুকার্য করা ফিতে সেলাই করার জন্য। নীচে বিভিন্ন ধরণের জড়ির কাজের তালিকা দেওয়া হল। জারদোজী : এটা ভারী এবং বেশী বিস্তারিত সূচি শিল্পের কাজ যেগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের সোনার সুতো, চুমকি, পুঁতি, ছোট মুক্তা, তার এবং গোটা। এটি ব্যবহৃত হয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ ধরণের পোশাক পরিচ্ছদকে অলংকৃত করার জন্য, ভারী কোট, তাকিয়া, পর্দা, শামিয়ানা, জন্তু ধরার ফাঁদ, ব্যাগ, টাকার ছোট থলি, বেল্ট বা কোমর বন্ধনী এবং জুতো। যে সমস্ত উপাদান সমূহের উপর এই সূচি শিল্পের কাজ করা হয় সেগুলি হল সাধারণত: ভারী রেশম, ভেলভেট (মখমল) এবং সাটিন (মসৃন, চকচকে রেশমি বস্ত্র সমূহ)। যে সমস্ত ধরণের সেলাই দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল, ‘সালমা-সিতারা’, ‘গিজাই’, ‘বদলা’, ‘কাটোরী’ এবং ছোট মুক্তা, অন্যান্যদের মধ্যে। প্রধান কেন্দ্রগুলি হচ্ছে দিল্লী, জয়পুর, বারাণসী, আগ্রা এবং সুরাটে। বয়স্করা শেখায় তরুণদের এবং এইভাবে এই দক্ষতা প্রজন্মের পর প্রজন্মে প্রবাহিত হচ্ছে। কামদানি: এটা হালকা ধরণের সূঁচের কাজ যেটা করা হয় হালকা জিনিষের উপর যেমন – মহিলাদের গায়ে দেওয়ার ছোট চাদর, ঘোমটা বা ওড়না এবং টুপি। সাধারণ সুতো ব্যবহার করা হয় এবং তার চাপ দিয়ে সেলাই এর সঙ্গে নীচে ঢোকানো হয় এবং একটা সাটিন-সেলাই অর্থাৎ নরম , মোলায়েম সেলাই এর প্রভাব তৈরী করছে। প্রভাব বা ফলাফল যেটা তৈরী হয়েছে তা চকচক করছে এবং একে বলা হয় ‘হাজারা বাত্তি’ (হাজার বাতি) । মীনা কাজ : এটাকে এইভাবে বলা হয় এনামেল বা কলাই এর কাজের সঙ্গে সাদৃশ্যের কারণবশত:। সূচি শিল্পের কাজ করা হয় সোনায়। কাটাও এর বেল : এটা পাড়ের বাঁধা ছাঁদ তেরী হয় তেল রং দিয়ে আঁকার শক্ত কাপড়ে এবং সমস্ত পৃষ্ঠদেশ পূর্ণ করা হয় ধারে চুমকি বসিয়ে। পাড়ের কৃৎকৌশলে একটা ভিন্নতা হচ্ছে জালের উপর কারুকার্য দিয়ে তৈরী করা ফিতে এবং ভর্ত্তি করা হয় জড়ি সেলাই এ এবং চুমকি দিয়ে। মাকাঈশ : পুরাতন শৈলীদের মধ্যে এটা একটা এবং করা হয় রুপার তার অথবা বদলা’র সাহায্যে। তার নিজেই সূঁচের কাজ করে, উপাদানকে ফুটো করছে সেলাই টাকে সম্পূর্ণ করার জন্য। বিভিন্ন ধরণের নকশা এইভাবে তৈরী করা হয়। তিল্লা অথবা মারোরী কাজ : এটা সেই ধরণের সূচি শিল্পের কাজ যেখানে সোনার সুতো সূঁচের সাহায্যে পৃষ্ঠতলের উপর সেলাই করা হয়। গোটা কাজ : বুনন হওয়া সোনার পাড় বিভিন্ন আকৃতিতে কাটা হয় বাঁধা ছাঁদে বিভিন্ন ধরণের বয়ন বিন্যাস তৈরী করার জন্য। জয়পুরে উপাদান সামগ্রীর পাড় অথবা শাড়ি কাটা হয় পাখি, জন্তু জানোয়ার এবং মানুষের মূর্তির আকৃতিতে, কাপড়ের সঙ্গে আটকানো হয়, এবং রুপা অথবা সোনার তার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, এটাকে আবেষ্টিত করা হয় রঙীন রেশম দিয়ে। এনামেল বা কলাই এর কাজের সঙ্গে এর মিল আছে। কিনারী কাজ : একটা ছোট ভেদ বা ভিন্নতা হচ্ছে কিনারী কাজ যেখানে চুমকি বসানো বা অলংকৃত করার কাজটা করা হয় ধারে বা প্রান্তসীমাতে সূত্রগুচ্ছের আকারে। এই কাজটা সাধারণত: পুরুষরা করেন এবং মুসলমান সমাজে মহিলা সম্প্রদায়।কাঁচামাল:- প্রাথমিক উপাদানসমূহ : রেশম, জড়ি, সুতি, পোষাক তৈরীর কৃত্রিম তন্তু, জ্যাকোয়ার ( ছিদ্রযুক্ত কার্ড ওয়ালা ) তাঁত, দড়ি ( সুতো – 80 নং / 60 নং ) , রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রেশমের মতন উজ্জ্বল তন্তু (ধাগা) 30 নং। শোভাবর্ধক উপাদান : ময়ূরের পালক রঞ্জক পদার্থ : বুকানী ( রঙ করার গুঁরো )প্রক্রিয়া:- বুননের জন্য নকশার নমুনা একটা কাগজে আঁকা হয়। নকশাটি সুতির তন্তুর উপর তিল্লী’র সাহায্যে স্থানান্তরিত করা হয় লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি কুন্ডলাকৃতি তারের জালির মাধ্যমে। এই কৌশলের নাম ‘জালা’, যার মধ্যে থাকে সমস্ত চিত্রলেখ নমুনা নকশা। এই জালাকে তাঁতের উপর থেকে ঝোলান হয় এবং লম্বাদিকের সুতোর সঙ্গে বাঁধা হয়, নকশা অনুযায়ী কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত লম্বাদিকের সুতো তোলা হয়। জড়ি অথবা রেশমের অতিরিক্ত আড়াআড়ি সুতো উত্তোলিত অংশে ঢোকানো হয়, লাইনের পর লাইন করে চলন্ত আড়াআড়ি সুতোর সঙ্গে। জালা পরিকল্পনাটি পরিবর্তিত হয়েছে পাঞ্চ করা (ছিদ্র করা) কার্ডের দ্বারা, জ্যাকোয়ার ( ছিদ্রযুক্ত কার্ড ওয়ালা ) তাঁত এই সমস্ত কিংখাব এর অলঙ্করণে। তিব্বতী বুনন নিবেদন ‘গাইসার’ হচ্ছে খুব ঘন করে বোনা। রেশম / জড়ি সুতো ছাড়াও, ময়ূরের পালক ব্যবহার করা হচ্ছে সাটিন (মিহি ও মসৃণ) বুননে যাতে সমগ্র পৃষ্ঠদেশটা পালকের তৈরী হয়। শোভাবর্ধনকারী নকশা বোনা হয় ঘন লাল, হলদে, নীল এবং সাদা সাটিন জমিতে সোনালী ও রুপালী জড়ি ব্যবহারের সঙ্গে।কৌশল :- অ্যাপলিক (এক রঙের উপাদান অন্য রঙের উপাদানের উপর খাটিয়ে তৈরী করা নকশার কাজ) এবং কেটে ফেলা কৌশল:- স্বাভাবিক ভাবে, সূক্ষ্ম সাদা পাকানো তন্তুর সুতি ব্যবহৃত হয় চিকন সূচি শিল্পের জন্য। কিছু সেলাই করা হয় কাপড়ের সামনের দিক থেকে, অন্যান্যগুলো পিছনের দিক থেকে। চিকন সূচি শিল্প বইয়ে শীলা পাইন খেয়াল করেন যে, ছয় ধরণের মৌলিক/ প্রাথমিক সেলাই আছে টোপ তুলে ফুল এবং পাতা তৈরী করার জন্য। টানা বা গুটানো কাজ(চিকন এর কাজে যে হিন্দি শব্দ ‘জালি’ বলে পরিচিত,যার মানে ফোঁড়ানো জাফরি সমেত জানালা, যেটার মধ্যে দিয়ে তাকাতে পারা যায় কিন্তু তাকান যায় না) এবং খাটাও( একটা অ্যাপলিক বা এক রঙের উপাদান অন্য রঙের উপাদানের উপর খাটিয়ে তৈরী করা নকশার কাজ এবং কেটে ফেলা কৌশল, যেখানে একটা কাপড়ের টুকরো অন্য কাপড়ের টুকরোকে বেষ্টন করে থাকে এবং তারপর কাটা হয়) এই ব্যবহৃত পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ করে। কি ভাবে পৌঁছাবেন :-
কোলকাতার বিমানবন্দর দমদমে অবস্থিত,শহরের কেন্দ্রবিন্দু থেকে প্রায় 17 কিমি উত্তর পূর্বে। বেশীরভাগ অন্তর্দেশীয় বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার সরাসরি পরিষেবার ব্যবস্থা আছে কোলকাতাতে ও কোলকাতা হইতে ভারতবষের্র অন্যান্য শহরগুলিতে যেমন দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই, পাটনা, বারাণসী, লখ্নৌ ইত্যাদি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বেশীর ভাগ দেশেই কোলকাতা থেকে সরাসরি বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা আছে।